“তবুও তুমি"
পর্ব ৭:
হঠাৎ দেখা
সময়: অক্টোবরের মাঝামাঝি।
স্থান: ঢাকা বইমেলা প্রাঙ্গণ, শীতের হালকা স্পর্শে ভেজা বিকেল।
সমুদ্র অফিসের কাজে বাইরে এসেছিল।
ছুটির ফাঁকে ঢুকে পড়ল মেলায়, হালকা হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই তার পা থমকে গেলো এক স্টলের সামনে।
একটা বই হাতে দাঁড়িয়ে আছে একজন নারী।
চোখে চশমা, হাতে একটা সাদা শাল।
কিন্তু সমুদ্রের হৃদয় থেমে গেলো চোখের দৃষ্টিতে।
মোহনা।
১৭ বছর, তারপর মেসেঞ্জারের হাজার কথা—
আর আজ, হঠাৎ… সামনে!
সমুদ্র নিঃশব্দে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল।
মোহনাও ধীরে ধীরে তাকিয়ে দেখে ফেলল ওকে।
দুইজনে দাঁড়িয়ে, মুখোমুখি।
কথা নেই, তবু হাজার কথা।
মোহনা হালকা একটা হাসি দিয়ে বলল—
“অবশেষে, চোখে চোখ।”
সমুদ্রের গলায় কথা আটকায়।
তবু বলে,
“তোমাকে এখনো ঠিক আগের মতোই দেখাচ্ছে।
একটু পরিণত, কিন্তু তবু মোহনা।”
মোহনা চোখ নামিয়ে বলল—
“তুমি আগেও এমন ছিলে… আজও তেমনই আছো।
শুধু এখন আমরা জানি, আমাদের মাঝে কিছুই নেই…
তবু কিছু একটা রয়ে গেছে।”
ওরা বসে পড়ে মেলার পাশে এক কোণায়।
চা খেতে খেতে স্মৃতি, জীবন আর অসম্পূর্ণ ভালোবাসার পাতায় পাতায় হাঁটে।
মোহনা বলে—
“তুমি কখনো অনুভব করো না, আমরা যদি একটু আগে সাহসী হতাম…?”
সমুদ্র ম্লান হাসে—
“তুমি পাশে না থেকেও আছো।
সারাজীবনের মতো।”
সেদিনের সেই বিকেল… হয়তো শেষ দেখা নয়,
কিন্তু কিছু দেখা শুধু একবার হলেই চিরকাল থেকে যায়।
সেই বিকেলের দেখা শেষ হওয়ার পর
সমুদ্র আর মোহনা আবার ফিরে যায় তাদের নিজ নিজ জীবনে।
তবে কিছু একটা বদলে যায় ভেতরে ভেতরে।
এখন আর প্রতিদিন কথা হয় না,
তবে যেদিন হয়, সেদিন হৃদয় ঝরে।
সমুদ্র একদিন মেসেজে লিখল—
“তোমার মুখটা এখনো প্রতিদিন দেখি,
চোখ বন্ধ করলেই।
তোমাকে ছুঁতে পারি না,
তবুও তুমি সবচেয়ে কাছের।”
মোহনা রিপ্লাই করল না।
কিন্তু রাত ১টা ১৭ মিনিটে একটা গান শেয়ার করল—
“তুমি আসবে বলে আমি পথ চেয়ে থাকি…”
সমুদ্রের সংসার ভালো চলছে।
স্ত্রী, সন্তান—সব আছে।
তবে মাঝে মাঝে সে খালি মনে বসে থাকে।
তাকিয়ে থাকে দূরের আকাশে—
যেখানে কোনো এক আড়ালে মোহনা আছে, মেসেঞ্জারে, মনে, সময়ের ওপারে।
মোহনার জীবনও চলে যাচ্ছে।
সে এখনো প্রতিদিন রান্না করে, বাচ্চার স্কুল সামলায়,
কিন্তু রাতে লুকিয়ে সমুদ্রের প্রোফাইল দেখে।
চোখে জল আসে না,
শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস আসে—
“আহা! যদি একটুখানি সময় আমাদের পক্ষে থাকতো…”
একদিন সমুদ্র লেখে—
“তুমি না থেকেও আমার পাশে আছো,
এই বেঁচে থাকাটার মধ্যেই তুমি মিশে গেছো।
তুমি হয়তো দূরে,
কিন্তু আমার সব অনুভবের কেন্দ্রে একটাই নাম—মোহনা।”
শেষ লাইনে মোহনা উত্তর দেয়:
“আমি তোমার সেই না বলা কবিতা—
যে কবিতা কেউ পড়েনি,
তবু শুধু তুমিই জানো, আমার প্রতিটি শব্দে ছিলাম শুধু তোমার…”
চলবে…
No comments:
Post a Comment