পর্ব ৯: ভালোবাসা, অনুচ্চারিত
নভেম্বরের শেষ দিকে এক বিকেল।
সমুদ্র অফিসে কাজ করছিল।
হঠাৎ মোহনা থেকে একটি ছোট্ট মেসেজ আসে—
“আজ তোমার কোলনির পাশে গিয়েছিলাম, ইচ্ছে করেই।”
সমুদ্রের বুক কেঁপে ওঠে।
সে জানে, তার বাড়ির পাশেই একসময় মোহনার মামাবাড়ি ছিল।
সেখানে এসেছিল মোহনা—কত বছর পরে!
সে সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই করে—
“তুমি আমাকে না জানিয়ে এলে?”
মোহনা লেখে—
“চাইনি চোখে চোখ পড়ুক…
আমি শুধু চেয়েছিলাম, একটু হেঁটে যাই তোমার শহরের পথে।
যেখানে হয়তো তোমার ছায়া লেগে থাকে ফুটপাতের ধুলোতেও।”
সমুদ্র কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে টাইপ করল—
“তুমি কি জানো, আমি এখনো তোমার জন্য অপেক্ষা করি…
যদিও জানি তুমি কখনো আসবে না।”
সেই রাতে…
সমুদ্র তার বালিশের নিচে মোহনাকে লেখা পুরনো একটি চিঠি রাখল।
যেটা সে কখনো পাঠায়নি।
লেখা ছিল—
“তুমি ছিলে আমার প্রিয় অভিমান।
তোমাকে ছাড়া জীবন হয়তো হয়েছে—
কিন্তু পূর্ণতা পায়নি।”
মোহনার পক্ষে থেকেও সে আর কিছু লেখে না।
তবে তার প্রোফাইলে একদিন দেখা গেল নতুন একটি কভার ফটো—
একটি কবিতা:
“আমরা না হয় ছুঁতে পারিনি,
তবুও ভালোবেসেছিলাম তো…
এই কি কম কিছু?”
বছরের শেষ মাস—ডিসেম্বর।
সমুদ্র এখন প্রমোশন পেয়েছে, ছেলেটা স্কুলে, স্ত্রী ব্যস্ত সংসার নিয়ে।
সবকিছুই ঠিকঠাক চলে…
তবুও কিছু একটা ভিতরে খালি।
মোহনাও আগের মতোই ব্যস্ত—
ঘড়ির কাটায় জীবন কাটছে।
তবে মেসেঞ্জারে আর খুব একটা কথা হয় না।
শুধু মাঝে মাঝে—হঠাৎ গভীর রাতে
সমুদ্র অনলাইন আসে…
মোহনা কিছু দেখে না,
কিন্তু অনুভব করে।
এক সন্ধ্যায়, সমুদ্র বারান্দায় বসে মোহনার প্রোফাইলে যায়।
প্রোফাইল পিকচারে নতুন ছবি—একটা বইয়ের পাতা,
কবিতার লাইন লেখা:
“আমাদের গল্পটা কেউ জানে না—
কারণ আমরা কেউ বলতে শিখিনি,
ভালোবাসা শব্দের বাইরে গিয়ে যত গভীর হয়।”
সমুদ্র শান্তভাবে হাসে।
চোখের কোণে একফোঁটা জল।
সে জানে, এই ভালোবাসা কোনো ‘হ্যাপি এন্ডিং’ পায়নি,
তবু এটাই তার জীবনের সবচেয়ে সত্য অনুভূতি।
সে লিখে,
“মোহনা, আমরা হয়তো জীবনটা কাটিয়ে ফেললাম…
কিন্তু হৃদয়টা রেখে গেলাম একে অপরের কাছে।
তুমি আমার হৃদয়ের সেই নদী,
যার পাড়ে আমি প্রতিদিন বসে থাকি—
ভেসে যাওয়া এক ভালোবাসার অপেক্ষায়।”
---
মোহনা আর রিপ্লাই করে না।
হয়তো পড়ে…
হয়তো চোখ মুছে আবার উঠে যায় নিজের কাজে।
তাদের গল্পটা শেষ হয় না,
কারণ কিছু গল্প কখনো শেষ হয় না।
সে গল্পগুলো নিঃশব্দে বেঁচে থাকে—
ক্যাফের কোণায়, ফেসবুক ইনবক্সে, অথবা…
ভোরের প্রথম আলোয় ভেসে আসা এক দীর্ঘশ্বাসে।
---
শেষ।
No comments:
Post a Comment